প্রধান পৃষ্ঠ


"Food influences the mind and it must be kept pure." - Bhagavan Ramana Maharshi ​

অনুবাদ : ​
"খাদ্য মনের উপর প্রভাব ফেলে, তাই সেটাকে (খাদ্য কে) শুদ্ধ ও পবিত্র রাখা উচিত।" - ভগবান রমনা মহর্ষি ​

ভাষ্য : ​

যখন আমরা রমনার সম্বন্ধে জানতে শুরু করি তখন আমরা দেখতে পাই যে মন টা আমাদের বন্ধু নয়। রমনার বলা পথ আমাদিকে "মন-নাশ" বা আমাদের মন কে নাশ করতে সাহায্য করে। আমরা যা কিছুই খাই, মন তা থেকেই তার খাবার পায়। খাবার যত শুদ্ধ ও সাত্বিক হবে, মনও ততই শান্ত ও শিথিল হবে। ভগবান গোটা জীবনে কোনো প্রকারের মাংস অথবা আমিষ খাদ্য ভক্ষণ করেননি। ওনার আশ্রমেও কোনো দিন আমিষ রান্না হয়নি। মাংস এবং আমিষ খাবার বর্জিত ছিল এবং আজও আছে। ভগবান কোনো দিনও কাওকে কিছু খেতে বা না খেতে বলেননি। খুব জোর হলে কি খাওয়া উচিত বা অনুচিত টুকু বলেছেন। আর সেটা হল যে মাংস কোনো মতেই খাওয়া উচিত নয়। এতে কোনো দ্বিমত নেই, কোনো রকমের সন্দেহের অবকাশ নেই। ​

আমার মনে পড়ছে, এক জায়াগায় পড়েছিলাম, ভগবানকে এক মহিলা ভক্ত প্রশ্ন করেছিল যে উনি (ভগবান) ডিম কেন খাননা। ভগবান বলেছিলেন যে "ওতে (ডিমে) প্রাণের সম্ভাবনা আছে।" যিনি প্রাণের সম্ভাবনা টুকু থাকলে সেটাকে অভক্ষ্য, অখাদ্য বলে বর্জন করেন তিনি অপর এক প্রাণী যাকে হত্যা করা হয়েছে তাকে কি করে খাবেন? আমরাই বা সেটা কি করে খাই? ​

অনেকে বলে যে পিয়াঁজ রসুন খাওয়া উচিত নয়। এবং তা ঠিকই। সাধনার পথে পিয়াঁজ রসুন আদা জাতীয় জিনিস না খাওয়াই ভাল কারণ এই খাদ্যগুলি মনে চাঞ্চল্য ঘটায়। সাধারণ মানুষের হয়ত এতে কিছু যায় আসে না, কিন্তু আপনি যদি সাধনা করছেন, মন কে শিথিল করতে চেষ্টা করছেন তাহলে এগুলি না খেলেই হয়ত ভাল। অনেকে আবার মাছ মাংস মুর্গা বা অন্নান্য অভক্ষ্য সেবন করে যাচ্ছেন আর নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিচ্ছেন যে, "আমার গুরুদেব পিয়াঁজ রসুন খেতে বারণ করেছেন, মাছ মাংস তো খেতে বারণ করেন নি।" এই ধরনের চিন্তা ভাবনা টা আমার মতে ভুল। জিহ্বার লালসা আমাদিকে কি সব পাপ করতেই না বাধ্য করে। ​

অনুমন্তা বিশসিতা নিহন্তা ক্রয়বিক্রয়ী। ​
সংস্কর্তা চোপহর্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতকাঃ। ​
- মনুস্মৃতি ৫ম অধ্যায়, ৫১তম শ্লোক ​

উপরোক্ত শ্লোকের মানে হলো : যে মাংস সেবন অথবা প্রাণী হত্যার অনুমতি দেয় বা পরামর্শ দেয়, যে হত্যা হেতু কোনো প্রাণী (মাছ পাঁঠা চিকেন বা যে কোন প্রাণী) কে নিয়ে আসে, যে প্রাণী কে হত্যা করে, যে মাংস বা মাছ বিক্রয় করে, যে মাংস বা মাছ ক্রয় করে, যে মাংস বা মাছ রাঁধে, যে মাংস বা মাছ পরিবেশন করে, যে মাংস বা মাছ আহার করে, খায়, এরা সবাই হত্যাকারী, ঘাতক। ​

হত্যাকারী বা ঘাতক মানেই পাপী, আর পাপী মানেই তা ভোগ করতে হবে। তার মানে সেই পুরুষ বা মহিলা পরবর্তী জন্মে এক নিরীহ প্রাণী হয়ে জন্ম নেবে যার সেই রকম প্রাণপাতী দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হবে আর হয়ত কষ্ট ব্যক্ত করার জন্য বাক্শক্তিও থাকবে না। লক্ষ্য করবেন, লোকেরা যেই প্রাণীগুলো কে খায়, তাদের কারুরই বাক্শক্তি নেই। ​

মনুস্মৃতিতেই ৫ম অধ্যায়, ৫৫তম শ্লোকে "মাংস" এর অর্থ বলা আছে : ​
মা স ভক্ষযিতাঽমুত্র যস্য মাসমিহাদ্ ম্যহম্। ​

(মাং বা মাম = আমাকে, সঃ = ভোজন করবে) ইহলোকে আমি যাহার মাংস ভোজন করছি পরলোকে সে আমাকে ভোজন করবে। ​

হত্যা ব্যতীত মাংসের প্রাপ্তি হয় না। তাই বেদ বহু জায়গায় পরিষ্কার ভাবে পশুহত্যা নিষেধ করেছে। ​

অথর্ববেদে (৬/১৪০/২) বলা হয়েছে : ​

ব্রিহিমন্নং যবমত্তমথো মাষমথো তিলম। ​
এষ বাং ভাগো নিহিতো রত্নেধেয়ায় দন্তৌ মা হিংসিষ্ট পিতরং মাতরং চ।। ​

অর্থ হল, হে দন্ত! তুমি অন্ন খাও, যব খাও, মাষকলাই ও তিল খাও। এই উত্তম পদার্থগুলি তোমার জন্যেই। তাঁদের খেও না যাঁরা মাঁ অথবা বাবা হতে সক্ষম। ​

ভেবে দেখুন। লোকে যে মাছ মাংস খাচ্ছে তাঁরা কারুর মাঁ বা কারুর বাবা। এদের হত্যার পাপ কি না ভোগ করিয়ে ছাড়বে? ​

আমরা এই সব জেনে সঠিক পথে, নিরামিষাশী হয়ে থাকতে পারি, অথবা, এসব কিছু না জেনেও, ভগবানের কথা শুনে ও ওনার পদচিহ্নে চলে, নিরামিষাশী হয়ে থাকতে পারি।